স্বপ্নের লাদাখ ভ্রমণ- ন্যাড়া পাহাড়ের টানে (পর্ব ৬)

বাস স্টপ বা বাস টার্মিনাল বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো গাবতলি বা সায়েদাবাদের মত বড় কোন জায়গা যেখানে অনেক বাস থাকবে সাথে বাস কাউন্টার। মজনু কা টিলাতে আশেপাশে কোন বাস কাউন্টার বা যাত্রী ছাউনি না থাকায় আমরা খুব কনফিউশনে পড়ে যাই, আমরা কি কোন ভুল জায়গায় চলে আসছি!!? অটোওয়ালা নিশ্চয়ই আমাদের টুপি পরিয়েছে যা কিনা টুরিস্টদের সাথে অহরহ হয় এখানে। নিশ্চিত হতে আশেপাশের মানুষদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারি আমরা ঠিক জায়গায়ই এসেছি, নির্দিষ্ট টাইমের আগেই এখানে বাস এসে দাঁড়াবে। যাক বাঁচা গেল, এখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাক চলছে। পরে খেয়াল করলাম আমরা দাড়িয়ে আছি নির্মল হৃদয় চার্চের পাশে আর সামান্য দুরে ইন্ডিয়ান অয়েল পেট্রোল পাম্প যা টিকেটে লেখা ছিল। টিকিটের গাঁয়ে লেখা নাম্বারে ফোন দিলে তিনি এখানে দায়িত্বরত একজন বাস স্টাফের নাম্বার দিলেন। ফোন দিয়ে বাসের স্টাফের সাথে দেখা করে সব কিছু নিশ্চিত হয়ে নিলাম।

মানালির উদ্দেশ্যে আমাদের বাস রাত ১০ঃ৩০ এ নর্দার্ন ট্র্যাভেলস এর। বাসের টিকিট আমরা বাংলাদেশ থেকে কেটে নিয়ে গিয়েছিলাম ভাড়া পড়েছিল ১৭০০ রুপি জনপ্রতি। বাসে ছাড়তে যেহেতু এখনো অনেক দেরি তাই লম্বা জার্নি শুরু করার আগে ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে নিতে হবে। খাবার হোটেল কোথায় আছে তা জেনে ৫ মিনিটের মধ্যে একটা পাঞ্জাবী ধাবাতে ঢুকলাম। গত শিমলা মানালি ট্যুরে ধাবার খাবার আমি একদমই খেতে পারিনি, এইবার মানুষিকভাবে তাই প্রুস্তুত ছিলাম। ফ্রেশ হয়ে রুটি, সবজি আর ডাল অর্ডার করলাম। ডিনার শেষে পাশের একটা দোকান থেকে লাচ্ছি নিলাম। সারাদিন রোজার পরে এক গ্লাস ঠাণ্ডা লাচ্ছি খেতেই মন প্রান সব জুড়িয়ে গেল। বাসের কাছে যাওয়ার আগে আরেক দফা ফ্রেশ হয়ে নিলাম।

ঠিক রাত দশটার সময় বাস এসে হাজির হয়। একই ধরনের কয়েকটা বাস থাকাতে সঠিক বাসটি খুঁজে পেতে বাসের স্টাফদের সাহায্য নিলাম। ব্যাগগুলো বক্সে দিয়ে আমাদের নির্দিষ্ট সিটে গিয়ে বসে পড়ি। চকচকে সেমি স্লিপার এসি বাস সাথে সিটগুলো বেশ আরামদায়ক। অনেক বড় জানালা, মাল্টি গিয়ার সিট সাথে কম্বল, জার্নিটা বেশ আরামদায়ক এবং উপভোগ্য হবে মনে হচ্ছে। কমপক্ষে ১৪ ঘন্টার জার্নি হতে যাচ্ছে এবং আমাদের উদ্দেশ্য যেহেতু লাদাখ যাওয়া তাই চেষ্টা করেছি যাতে জার্নি গুলো একটু আরামদায়ক হয়।

এদিকে আগামীকাল ইন্ডিয়াতে ঈদ হবে সে ঘোষণা একটা ইন্ডিয়ান অনলাইন পত্রিকা থেকে জানতে পারি। আমরা সবাই সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাই। বাড়িতে ফোন করে জানতে পারি বাংলাদেশে ঈদের চাঁদ দেখা যায়নি তাই আগামীকাল ঈদ হবে না। কি আর করার আমরা আগামীকাল ঈদ উদযাপন করব। বাস একটু লেট করে ১০:৫০ এর দিকে ছাড়লো। আমি দ্বিতীয়বারের মতো মানালি যাচ্ছি, আর বাকিদের জন্য প্রথমবার। যদিও আমি প্রথমবার শিমলা হয়ে তারপরে মানালি গিয়েছি। এগারোটার দিকে গিন্নি ফোন করে জানায় আগামীকাল বাংলাদেশে ঈদ হবে, দেশে নাকি চাঁদ দেখা গিয়েছে। চাঁদ কেন এত দেরিতে উঠলো কিছুই বুঝলাম না, এ এক আজব ঈদ। গাড়িতে লোকাল বাসের মত কিছুদূর পরপর যাত্রী উঠছিল, কিন্তু হাইওয়ের কোন একটা জায়গায় গিয়ে আধা ঘণ্টার বেশি একজন যাত্রীর জন্য বাস দাঁড়িয়ে থাকে যে কিনা বাস মিস করেছিল। যাই হোক বাসের সকল যাত্রী উঠে যাওয়ার পর হাইওয়ে ধরে ভালো গতিতেই এগিয়ে যাচ্ছিল। এসির বাতাসে একটু ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছিল তাই ক্লান্ত শরীরে বাসে থাকা কম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।