স্বপ্নের লাদাখ ভ্রমণ - চতুর্থ পর্ব (প্রথম বিমান যাত্রা)
বিমান রানওয়ের স্পর্শ ছেড়ে আলতো ভাবে হাওয়ায় ভাসতে শুরু করলো। প্রথমবার বিমান যাত্রা হওয়াতে শুনতে বোকার মত শোনা গেলেও, হাওয়ায় ভাসার কয়েক সেকেন্ড পর আমার মনে হয়েছিল হয়তোবা বিমান আর উঠতে পারবে না। জানালা দিয়ে নিচে তাকাতেই নিচের বাড়িঘর রাস্তাঘাট গুলো গুগুল ম্যাপে জুম আউট করার মত ছোট থেকে ছোট হয়ে যাচ্ছিল। ছোটবেলা থেকেই উচ্চতা জনিত সমস্যাটা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারিনি, এখনো ২০% রয়ে গেছে। আমার মাথায় কেমন যেন চক্কর দিতে লাগল। এতদ্বসত্ত্বেও নিজের প্রথম বিমান জার্নির কোন কিছুই মিস করতে চাচ্ছিলাম না।
বিমান আস্তে আস্তে মেঘের উপরে চলে আসে আর আমার ভয়ও দূর হতে থাকে। উচ্চতার কারণে কানে প্রচণ্ড চাপ অনুভব করছিলাম। খানিকটা সময়ের জন্য আমি কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছি। বিমান উড়ে চলেছে ৩৩ হাজার ফিট উপর দিয়ে। আমাদের নিচে এখন যতদূর চোখ যায় শুধু মেঘ আর মেঘ। যেন ভেলায় চড়ে মেঘের সমুদ্রে ভেসে চলেছি অজানা কোন গন্তব্যে।
বিমান বালারা খাবার বিক্রি করছিল, শুধু ওয়ান টাইম গ্লাসে পানিটুকুই ফ্রিতে দিচ্ছিল। ইন্ডিগো তে ফ্লেক্সি টিকেট থাকাতে আমাদের টিকিটে খাবার কমপ্লিমেন্টারি ছিল। বাজেট এয়ার গুলোতে সাধারণত ফ্রি খাবার দেয় না। বিমানবালা প্রায় আধাঘণ্টা পর এসে জিজ্ঞেস করলেন আমরা কি খেতে চাই তা যেন মেনু কার্ড থেকে তাদেরকে বলি। খাবার মেন্যুতে পোহার সাথে ভুজিয়া (চানাচুর), স্যান্ডউইচ, কুকিজ এমন খাবার ছাড়া আর কিছু ভাল না পাওয়াতে আমরা ২ জন পোহা আর স্যান্ডউইচ অর্ডার করি। অর্ডার করার পর তাকে বলি আমাদের খাবার পরে দেওয়া যাবে কিনা? যেহেতু আমরা রোজা রেখেছি তাই বিমান থেকে নামার একটু আগে নিলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। সে বলল ঠিক আছে বিমান ল্যান্ড করার একটু আগে আমাদের সার্ভ করবেন।
মোটামুটি দুই ঘণ্টা পার হওয়ার পর পাইলট ঘোষণা করলেন আমরা দিল্লির আকাশে প্রবেশ করেছি। প্লেন আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ল্যান্ড করবে, আর সাথে দিল্লির আবহাওয়া সম্বন্ধে একটা ব্রিফ করলেন।বিমানবালা আমাদের হাতে খাবার পৌঁছে দিয়ে গেলেন ল্যান্ড করার সামান্য কিছুক্ষণ আগে। সত্যি কথা বলতে ল্যান্ড করার সামান্য আগেও ভেবেছিলাম মনে হয় ঠিক জায়গায় নামতে পারবে না। আমার আজগুবি ধারনা ভুল প্রমান করে পাইলট নিখুঁতভাবে বিমান মাটিতে নামিয়ে আনেন। আস্তে আস্তে আমাদের দিল্লি এয়ারপোর্ট টার্মিনাল ১ এর দিকে নিয়ে যান।
আমাদের ব্যাগ সংগ্রহ করতে করতে ইফতারের সময় হয়ে যায়। এয়ারপোর্ট এর বাইরে এসে বিমান থেকে দেওয়া হালকা নাস্তা সবাই ভাগ করে ইফতার সেরে নিলাম। ইফতার করে মেট্রো স্টেশনের দিকে হাঁটতে থাকি, কারণ আমাদের পরবর্তী গন্তব্য 'মজনু কা টিলা' যেতে হবে। সেখান থেকে আমাদের মানালি যাওয়ার বাস ছাড়বে। মেট্রো স্টেশন যাওয়ার জন্য আমাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে গুগল ম্যাপ।
চলবে.........
৫ম পর্বের লিংক এখানে