ভ্রমণ ডায়েরী

Home News Contact About

স্বপ্নের লাদাখ ভ্রমন পর্ব ৫ (দিল্লী মেট্রো বিড়ম্বনা)

আল-আমিন সরকার

Lanavola

তিন-চার মিনিটের মধ্যেই মেইন রোডে চলে আসি। বাম দিকে সামান্য একটু হাটতেই গুগোল ম্যাপ অনুযায়ী মেট্রো স্টেশনে পৌছে যাই। কিন্তু এখানে কিছুই চোখে পড়ছে না। না আছে কোন স্টেশনের বিল্ডিং, না আছে শত শত মানুষের আনাগোনা। জিজ্ঞেস করবো এমন কাউকেও পাচ্ছি না। কি একটা অবস্থা!!! আর সামান্য একটু সামনে যেতেই বাম পাশে একটা লিফট লক্ষ করলাম, ধারনা হলো মেট্রো স্টেশন হয়তো মাটির নিচে হবে। তাছাড়া এমন জায়গায় লিফট থাকার অন্য কোন কারণ থাকার কথা না। যা হওয়ার হবে, কিছু না ভেবেই লিফটে উঠে আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যাই কমপক্ষে তিন তলা পরিমান নিচে। লিফট থেকে নামার পরে কর্তব্যরত একজনকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারি আমরা ঠিক জায়গায় এসেছি।

আমাদের উদ্দেশ্য "মজনু কা টিলা" যাওয়া তাই সেখানে টিকিট কাউন্টারে বসেন এমন একজনকে জিজ্ঞাসা করি আমাদের কোথায় নামলে সুবিধা হবে। তিনি এবং সাথে আরো কয়েকজন প্যাসেঞ্জার আমাদের বিধানসভা মেট্রো স্টেশনে নামার পরামর্শ দেন। আমার বাদে বাকি সবার জন্য ৫০ রুপি করে বিধানসভা মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত টিকিট কাটি। আমার টিকিট করিনি কারণ হলো, আমার এক বন্ধু দিল্লী মেট্রোর একটা প্রিপেইড কার্ড দেশ থেকে আসার আগে দিয়ে দিয়েছে। ব্যাগ স্ক্যানারে দিয়ে সবাই নির্দিষ্ট গেট দিয়ে প্রবেশ করি, কিন্তু আমি যখন মেট্রো কার্ড পাঞ্চ করি তখন কেন যেন মনে হলো ব্যালেন্স ৪০-৪৯ রুপি (এতো দ্রুত খেয়াল করে উঠতে পারিনি) এমন কিছু আছে। সন্দেহ দূর করতে কর্তব্যরত একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, সে পাশেই একটা কাউন্টারে যেতে বলল। ভদ্রলোককে বলাতেই আমার কাছ থেকে কার্ডটি চেয়ে নিল। চেক করে দেখে বললেন ব্যালেন্স আছে ৪৩ রুপি। সে আমাকে বলল, আমি এখন চাইলে কমপক্ষে ২০০ রুপি লোড নিতে পারি।

আমি বিকল্প কিছু জানতে চাইলে উনি বলেন, আমি যদি চাই তবে উনি আমার এই এন্ট্রি বাদ করে দিতে পারেন এবং আমাকে নতুন করে ম্যানুয়াল টিকেট করে নিতে হবে। এদিকে সবাই এক ফ্লোর নিচে গিয়ে আমার আর মেট্রো উভয়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। তারা মনে মনে হয়তো ভাবছেন হুজুর মানুষ আবার কি ভেজালে পড়ে গেল!! আমার ঐ এন্ট্রি ক্যানসেল করে দেওয়ার পর আমাকে আবার বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় টিকিট কাটার জন্য। টিকিট কেটে আবার ব্যাগ স্ক্যান করে মেট্রোর প্লাটফর্মে চলে যাই। আমি যদি খেয়াল না করতাম এক্সিট করার সময় আরো বড় ধরনের ঝামেলায় পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতো। আর এই কার্ডে আমার এন্ট্রি যদি না কাটা হতো তবে, যেদিন আবার এই কার্ড ব্যবহার করা হতো এই কার্ড থেকে যেকোনো একটা ভাড়ার পরিমাণ টাকা কেটে নিত।

Lanavola

মেট্রোর জন্য অপেক্ষা করছি আর এমন সময় আমার মনে পড়লো, তাড়াহুড়ায় আমি আমার পাসপোর্ট রাখার ছোট ব্যাগটা স্ক্যানারে দিয়েছিলাম সেটা ভুলে নিয়ে আসি নি। দৌড়ে আবার উপরে গেলাম, একজন আমাকে দেখেই বলল আপনি কি কিছু খুজছেন? আমি আমার ছোট একটা ব্যাগ খুজছি বলতেই উনি বললেন, কি আছে আপনার ব্যাগে? আমি বললাম পাসপোর্ট, পাওয়ার ব্যাংক...... উনি ব্যাগ আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন ঠিক আছে এই নিন, তবে এমন ভুল আর করবেন না। আমরা এখনই ঘোষণা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচি, তাদের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসি।

দিল্লি মেট্রো খুব জটিল মনে হয় আমার কাছে কারণ, মেট্রো রুটগুলো বিভিন্ন রং যেমন রেড, ইয়েলো, ব্লু, গ্রিন, মেজেন্ট ইত্যাদি দিয়ে নির্দেশিত। এখন আমাদের বিধানসভা মেট্রো স্টেশনে যেতে হলে এখান থেকে মেজেন্টা কালারের মেট্রো লাইনে আগে যেতে হবে 'হাউস খাস' স্টেশন পর্যন্ত। তারপরে বিমান যাত্রায় ট্রানজিটে যেমন বিমান পাল্টাতে হয় ঠিক তেমন করে মেট্রোর লাইন পাল্টিয়ে ইওলো (হলুদ) লাইনে যেতে হবে বিধানসভা মেট্রো স্টেশনে। যদি কোনো কারণে হাউস খাস স্টেশন পার হয়ে অন্য কোন স্টেশনে চলে যাই তাহলে আমাদের মত দিল্লিতে নতুন লোকের বিশাল সমস্যায় পড়ে যেতে হতে পারে।

একটা মেট্রো এসে আমাদের সামনে থামে, ভিড় কম হওয়াতে সিট পেতে খুব একটা সমস্যা হলো না। মেট্রোতে বসে কিছুক্ষণ আগের কথাগুলো ভাবছিলাম আর নিজের প্রতি রাগ ঝাড়ছিলাম। যদি পাসপোর্ট হারিয়েই যেতো তাহলে কি হতো!! ভাবতেই গায়ের লোম দাড়িয়ে যাচ্ছিল। কি একটা ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছিলাম, যদি মেট্রোতে উঠে পড়তাম তাহলে আজ একটা কেলেঙ্কারি বেধে যেত। সময় যাওয়ার সাথে সাথে ভিড়ের মাত্রা বাড়তে লাগলো, কারণ অফিস ছুটির টাইম। হাউস খাস স্টেশনে এ্লে অনেকটা ভিড় ঠেলে মেট্রো থেকে নামতে হলো।

এবার আমাদের টার্মিনাল পরিবর্তন করার পালা। ইয়েলো লাইনে যেতে হলে আমাদের আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে একতলা উপরে উঠতে হয়। তারপরে মেঝেতে হলুদ রং দিয়ে আঁকা পায়ের ছাপ দেখে দেখে স্টেশনের অন্যদিকে আবার একতলা নিচে চলে যাই। হয়ে গেল লাইন পরিবর্তন, এবার অপেক্ষা মেট্রো আসার। মনে হয় কয়েক হাজার মানুষ দাড়িয়ে আছে মেট্রোতে উঠতে। আজ আমাদের পরিক্ষা হয়ে যাবে এই অভিজ্ঞ লোকদের সাথে যারা প্রতিনিয়ত এই ভীরের সম্মুখীন হন। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সবাই একসাথে একই মেট্রোতে উঠা। অনেক ঠেলাঠেলি করে সবাই আগের থেকেও বেশি ভীড়ের একটা মেট্রোতে উঠে পড়ি। নিউ দিল্লি স্টেশনের পরে একটু ভিড় কমাতে একটা সিট পেয়ে যাই। সব মিলিয়ে প্রায় একঘন্টা মেট্রো জার্নি শেষে আমরা বিধানসভা মেট্রো স্টেশনে নেমে পড়ি।

অনেকেই হয়তো বলতে পারেন এত ভিড়ের মধ্যে মেট্রোতে যাওয়ার কি দরকার ছিল? তাদের জন্য বলতে পারি মেট্রোতে যাওয়ার কারণে এই অফিস টাইমে আমাদের অনেক সময় সেভ হয়েছে সাথে টাকাও। আমরা যদি একটা গাড়ি ভাড়া করে নিতাম তাহলে আমাদের জনপ্রতি আরও কমপক্ষে তিন-চারগুণ ভাড়া বেশি দিতে হতো এবং ট্রাফিক জ্যামের কারণে সময় নষ্ট হতো। মেট্রো স্টেশন থেকে বের হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অটোতে জনপ্রতি ২০ রুপি দিয়ে আমরা মজনু কা টিলা তে পৌঁছাই প্রায় রাত পৌনে নয়টার দিকে।

চলবে.........

৬ষ্ঠ পর্বের লিংক এখানে