ভ্রমণ ডায়েরী

Home News Contact About

স্বপ্নের লাদাখ ভ্রমণ - তৃতীয় পর্ব (প্রথম বিমান যাত্রা)

সকাল ১০ টায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে গোসল শেষে সাড়ে এগারোটার দিকে হোটেল থেকে চেক আউট করি। মেইন রোডে এসে মতিউর ভাইকে হাওড়া গামী বাসে উঠিয়ে দিলাম, কারণ তার সিএমসি হাসপাতালে (ভেলর) যাওয়ার জন্য ট্রেন রাতে শালিমার থেকে ছাড়বে। যেহেতু সে প্রথমবার কলকাতায় এসেছেন তাই হাওড়া থেকে শালিমার কিভাবে যেতে হয় তা ভালভাবে বুঝিয়ে দিয়েছি তাকে। তারপর আমরা ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে হেঁটে হেঁটে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস এয়ারপোর্টে (দমদম এয়ারপোর্ট) পৌঁছে যাই। যাত্রী হিসেবে এই প্রথম আমার এয়ারপোর্টে আসা।

Lanavola

ডোমেস্টিক টার্মিনালে কোন গেট দিয়ে ঢুকতে হবে সেটা জেনে ছোট একটা লাইনে সিরিয়ালে দাড়াই। আস্তে আস্তে সামনে এগুতে থাকি, এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি অফিসার আমাদের টিকেট দেখে বডি চেক শেষে সামনে যাওয়ার অনুমতি দেন। সামনেই একটা স্ক্যানারে ব্যাগ দিয়ে চেক শেষে সবাই এয়ারপোর্টের ভিতরে ঢুকে যাই। ভিতরে ঢুকে একটু সামনে বাম পাশে সেলফ চেক ইন এর ৩-৪ টা ডিভাইস দাড় করানো আছে। সেখানে ইন্ডিগো এয়ার সিলেক্ট করে PNR নাম্বার দিতেই সিট ম্যাপ চলে আসে। আমার আর সুজন ভাইয়ের আগে থেকেই ওয়েব চেক ইন করা ছিল (আমার সিট জানালার পাশে নেওয়া ছিল আগেই ১৮০ রুপি এক্সট্রা দিয়ে)। এখন শুধু বোর্ডিং পাস নিয়ে নিলাম। বাকিদেরও এক এক করে বোর্ডিং পাস নিয়ে নিলাম।

Lanavola

আমার আর সুজন ভাইয়ের ব্যাগের ওজন মনে হচ্ছে একটু বেশি হবে তাই ব্যাগ সিল করে চেক ইন কাউন্টারে দিয়ে দিলাম। যদিও কাধের ব্যাগ চেক ইনে না দিলেও পারতাম, তবুও নিজেকে ফ্রি রাখতে ব্যাগ দিয়ে দিলাম। কিছুক্ষন এয়ারপোর্টের ভিতরে ঘোরাঘুরি আর সবাই মিলে ছবি তুলে সময় কাটাতে থাকি। একটা ব্যাপার জেনে রাখা ভাল, ইন্ডিয়ান ডোমেস্টিক বিমান গুলোতে চেক ইন ব্যাগেজ হিসেবে ১৫ কেজি আর হ্যান্ড ব্যাগেজ হিসেবে ৭ কেজি ফ্রিতে নেওয়া যায়। এর উপরে হলে কেজিপ্রতি হিসেবে এক্সট্রা চার্জ দিতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে টিকেটের মধ্যে শুধু হ্যান্ড ব্যাগেজ ৭ কেজি লেখা থাকে। তাই আপনি টিকেট কাটার সময় ভালভাবে জেনে নিন আপনি কত কেজি ফ্রিতে নিতে পারবেন। তাছাড়া কি কি আপনি বিমানের ভিতর আপনার সাথে রাখতে পারবেন, আর কি কি আপনি আপানার চেক ইন ব্যাগেজে দিতে পারবেন না তাও ভালভাবে জেনে নেওয়া ভাল।

Lanavola

ওয়াশরুম থেকে ওযু করে জোহরের নামাজ একটা সিটে বসে ইশারায় আদায় করে নিলাম। দুপুর দুইটার দিকে ফাইনাল সিকিউরিটি চেকিং এর জন্য লাইনে দাড়াই। সিকিউরিটি অফিসার আমার মোবাইল, মানিব্যাগ, জুতা, বেল্ট, সাথে ছোট একটা ব্যাগ সব একটা ট্রেতে রাখতে বলেন। তিনি আমার শরীর ভালভাবে চেক করে ট্রে টা স্ক্যানারের ভিতরে দেন আরও একবার ভালভাবে চেক করতে। সবকিছু ঠিক মত শেষ করে ফ্লাইট এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।

অন্যদিকে আমাদের ট্যুরের ষষ্ঠ সঙ্গী শিমুল ভাই আগরতলা থেকে আমাকে ফোন দিয়ে জানায় তার ফ্লাইট কিছুক্ষণের মধ্যেই কলকাতার উদ্দেশ্যে উড়াল দিবে। সাড়ে তিনটার দিকে শিমুল ভাই কলকাতা এয়ারপোর্টে নেমে আমাকে ফোন দিলে তাকে আমাদের লোকেশন বলে দেই। ১০ মিনিটের মধ্যে আমারা ৬ জন গ্রুপ মেম্বার একত্রিত হয়ে যাই।

আজ আমার জীবনে প্রথমবার বিমান যাত্রা করার সুযোগ হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই আমি খুবই এক্সাইটেড ছিলাম। বিকেল চারটার সময় বোর্ডিং পাস এ লেখা 8A গেটে দিয়ে সবাই লাইন ধরে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের নির্ধারিত বাসে উঠে পড়ি। বাসে করে বেশ অনেকটা দূরে নিয়ে বিমানের ঠিক সামনে আমাদের নামিয়ে দেওয়া হয়। এত কাছ থেকে বিমান আমার এই প্রথমবার দেখা। বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না এত বড় একটা বিমান আমার ঠিক ছুঁয়ে দেখার দূরত্বে। বিমানে ওঠার সময় আরেক দফা বোর্ডিং পাস চেক করে উষ্ণ অভ্যর্থনায় বিমানে স্বাগত জানানো হয়।

Lanavola

নির্দিষ্ট সিটে গিয়ে বসে পড়ি, আমার পাশের সিটে সুজন ভাই। সব যাত্রী উঠে গেলে বিমানের পাইলট ঘোষণা দেন আমরা দিল্লির উদ্দেশ্যে কিছুক্ষণের মধ্যেই উড়ান শুরু করব। পাইলট নিজের এবং সকল ক্রুদের নাম, কে কোন স্টেট থেকে এসেছেন ইত্যাদি বলে পরিচয় দেন। বিমান আস্তে আস্তে রানওয়ের দিকে চলতে থাকলো আর বিমানবালারা সেফটি ইনস্ট্রাকশন এর অডিও ক্লিপ চলার সময় তা ইশারার মাধ্যমে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। সিট বেল্ট বেঁধে নিলাম, বিমান রানওয়েতে যাওয়ার পর বিকট শব্দে প্রচণ্ড গতিতে দৌড়াতে শুরু করলো নীল আকাশে উড়াল দেওয়ার জন্য।

চলবে.........

৪র্থ পর্বের লিংক এখানে