গুয়াংজুতে প্রথম দিন-শেষ পর্ব

কম্পিউটারাইজড টিকেটে ডেসটিনেশন চাইনিজ এ লেখা কিন্তু গেট নং ইংরেজিতে লেখা। দেড় ঘন্টা পর বাস। কিছুই করার নাই, চলে গেলাম তিন তলায়। ওখান থেকেই বাস ছাড়বে। গিয়ে দেখি ঐ গেটের সামনে বাস দাড়িয়ে আছে। তাড়া তাড়ি চলে গেলাম বাসে উঠবো, গেটে যে এটেনডেন্ট মেয়েটি ছিল, ওকে আমার টিকেট দেখালাম।ও চাইনিজে কি বলল বুঝলাম না। পরে ইশারায় আমাকে বসতে বলল আর বলল যে এটা আমার বাস নয়। কি আর করা বসে থাকলাম।

১০ মিনিট পর দেখি ওয়াকি টকি হাতে একটা মেয়ে এসে এই গেটের সামনে বসা সবাইকে উদ্দেশ‌্য করে কি বলছিল। চাইনিজ বুঝি না তাই আমিও কিছুই বুঝলাম না। তারপর আমার সামনে আসলে ওকে আমার টিকেট দেখালাম। আমার টিকেট দেখেই যেন খুশী হল সে, আমাকেই খুজছে সে। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বলল যে আমার যে বাসের টিকেট ওটা গ‌্যারেজে গেছে রিপিয়ারিং এর জন‌্য। ইতিমধ‌্যে ওয়াকি টকি তে কাকে যেন কি বলল। আমাকে অপেক্ষা করতে বলল। একটু পর আরেকজন মেয়ে এসে হাজির। এই মেয়েটি আরো ভাল ইংরেজি জানে বলেই আমাকে হেল্প করতে এসেছে। সে বলল যে আমার এই বাসটির আরো ২ ঘন্টা ডিলে হবে। আমি তখন তাকে বলি যে অন্য কোন গাড়ীতে আমাকে শিফট করে দেওয়া যায় কিনা।

প্রথম থেকেই যে খুত খুত ভাব টা ছিলো তার ব‌্যাপারে শিউর হতে ওর কাছে জানতে চাইলাম যে ঐ ডেসটিনেশন টা কি কোন রেল স্টেশন? ও বলল না, ওটা কোন রেল স্টেশন নয়। এবার জিগাইলাম এটার লোকেশন টা কোথায়, কতদূরে? বলল এটা প্রায় ১৫০ কিমি দূরে। আমি বললাম যে কোন ভুল হইছে হয়ত। আমি তো সাউদার্ন স্টেশনে যেতে চাই। আমার কথা ওকে বুঝাতে পারলাম না। তখন সে বলল যে আমার কোন চাইনিজ ফ্রেন্ড আছে কি যে আমার হয়ে ওকে বুঝাতে পারবে যে আমি কোথায় যেতে চাই। তখন আবার ফোন দিলাম আমার সেই ফ্রেন্ড কে যাকে অনেক আগে একবার ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু কথা হয়নি। এবার ওকে পেলাম, ফোনে ওকে বললাম যে আমি সাউথ স্টেশনে যেতে চাই অথচ আমি এদেরকে বুঝাতে পারছি না। পরে ওর সাথে আমার ফ্রেন্ডকে কথা বলিয়ে দিলাম। ও বুঝল। আমাকে নিয়ে সোজা নীচে নেমে এল।

নিয়ে গেল অন‌্য একটা কাউন্টারে। সেখানে গিয়ে আমার আগের টিকেট টা ফেরত দিয়ে অন‌্য আরেকটা টিকেট ইস‌্যু করিয়ে আমার হাতে দিলো এবং ৫০-৬০ টাকা ফেরত পেলাম। তারপর সে আমাকে নিয়ে নীচতলায় একটা গেটে নিয়ে ওখানকার এটেনডেন্ট কে বলে দিল, আমাকে কোন গাড়ীতে উঠিয়ে দিতে হবে। তারপর বিদায় নিল সে। কিছুক্ষন পর স্টেশনে যাওয়ার বাস আসলে আমাকে সেই বাসে উঠতে ইশারা করল ঐ গেটের এটেনডেন্ট। ৪০-৪৫ মিনিট পর গুয়াংজো সাউথ স্টেশনে এসে পৌছালাম।

গুয়াংজো সাউথ স্টেশনে আসতে বাসের টিকেট নিয়ে যে ঝামেলায় পড়লাম তাতে মনে কোণে উকি দিলো হাইস্পীড ট্রেনের টিকেট কাটতে টিকেট কাউন্টারে না আবার কোন ঝামেলায় পড়ি। বিশাল স্টেশনে এসে দেখলাম যে অনেক মেশিন রাখা আছে। এগিয়ে গেলাম একটা মেশিনের কাছে। মেশিনের কাছে এটেনড‌্যান্ট ও আছে দেখলাম। আমাকে দেখে সে মেশিনের ভাষা ইংরেজীতে রুপান্তর করে দিল। আমার জন‌্য সহজ হল এবার। ম‌্যাপ দেখে ডেসটিনেশন সিলেক্ট করে টিকেট কেটে নিলাম, খুব সোজা। এরপর সোজা উপরে উঠে গেলাম। যখন টিকেট কাটলাম তার ৪০ মিনিট পর যে ট্রেন ছিল সেটার টিকেট পেলাম না। পেলাম ১ ঘন্টা পরের ট্রেনের।

প্রায় প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় ট্রেন আছে। যাই হউক, টিকেট এর সাথে কমপ্লিমেন্টারী হাফ লিটার পানির বোতল দিল। ওটা ভিতরে গিয়েই কালেক্ট করতে হল। আর অপেক্ষার এই সময়ে হালকা কিছু খাবার ও খেয়ে নিলাম। যথা সময়ে ট্রেনে চড়ে বসলাম। আর এনজয় করলাম ম‌্যাক্সিমাম ৩৪৫/- কিমি পার ঘন্টা স্পীডে ট্রেন ভ্রমন। ২ ঘন্টা ২০ মিনিটে প্রায় ৮০০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে Changsha South Station এ পৌছালাম। এর আগে ওদেরকে টেক্সট করে দিয়ে ছিলাম যে কটার সময়ে আমি স্টেশনে পৌছাব। স্টেশনে এক্সিট গেটে দাড়িয়ে ছিল আমার ফ্রেন্ড, তার কলিগ আর কোম্পানীর মালিকের বউ। আমাকে পিকআপ করতেই এসেছে ওরা।ওদের সবার সাথেই পরিচয় রয়েছে মেসেন্জার এর মাধ‌্যমে।