ভ্রমণ ডায়েরী

Home News Contact About

লোনাভালাতে একদিন প্রথম পর্ব

মোবাইলে দেওয়া এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙলো রাত ০৩:৩০ মিনিটে। সবাইকে ঘুম থেকে তুলে যারা ইন্ডিয়ান সহযাত্রী ছিল তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিলাম। নির্দিষ্ট সময়ের 10 মিনিট পর ট্রেন পুনে স্টেশনে প্রবেশ করল। স্টেশনে নেমেই আমাদের পরবর্তী গন্তব্য লোনাভালা যাওয়ার উদ্দেশ্যে লোকাল ট্রেনের টিকেট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম, ভাড়া জনপ্রতি ১৫ রুপি। বাকিরা এক এক করে স্টেশনের ওয়েটিং রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসলো। নিজেও ফ্রেশ হয়ে ট্রেন ছাড়ার নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে গিয়ে ট্রেনের অপেক্ষা করতে থাকলাম। ভোর 4:30 এ ট্রেন এসে হাজির হয়। এটাই মনে হয় প্রথম ট্রেন আজকের।

Lanavola

ট্রেনে উঠে কোন মত সবাই যার যার সিট নিয়ে বসে পড়ি। লোকাল ট্রেনে এই সময়ে এতটা ভীড় আশা করিনি। অর্ধেকের বেশি রাস্তা শেষ হতেই ট্রেনের বেশিরভাগ যাত্রী নেমে যাওয়াতে আমরা ফাঁকা ট্রেনে আয়েশি ভঙ্গিতে বাকি যাত্রাটা শেষ করলাম। স্টেশনের যত কাছাকাছি আসছিলাম ভোরের স্নিগ্ধতা, আর সকালের হিমেল হাওয়া লম্বা যাত্রা শেষে প্রশান্তি এনে দিয়েছিল। কিছুটা দূরের পাহাড় গুলোতে বাড়িগুলোতে আলো যেন জোনাকির মত জ্বলছে।

Lanavola

স্টেশনে নামতে নামতে ভোর ০৫:৫৫ বাজে। সূর্যিমামা পূর্ব আকাশে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছিল। প্রথমেই স্টেশনের ক্লোয়াক রুমে নিজেদের ব্যাগগুলো রেখে বুকিং কাউন্টারে চলে যাই। সেখানে বিশাখাপত্তনম স্টেশনে থাকার জন্য রিটায়ারিং রুম বুক করি। একেক রুমে দুইজন করে থাকার ব্যবস্থা। রাত আটটা থেকে পরদিন সকাল আটটা পর্যন্ত 12 ঘন্টার জন্য রুম প্রতি ভাড়া তিনশ রুপি করে (মানে জনপ্রতি ১৫০ রুপি)।

লোনাভালা সম্বন্ধে আমাদের বিশেষ কোন প্ল্যান ছিল না। গুগোল থেকে কয়েকটা জায়গা সম্বন্ধে হালকা একটু জেনে স্টেশন থেকে বেরিয়ে যাই। প্রথমে নাস্তা করে (জনপ্রতি ৭৭ রুপি) একটি জীপ ঠিক করি নির্দিষ্ট কিছু জায়গা দেখার জন্য, ভাড়া ১৫০০ রুপি।

Lanavola

প্রথমে চলে যাই তিন কিলোমিটার দূরে খান্ডালা। একটা জনপ্রিয় হিন্দি গানে "আতি কা খান্ডালা" এই জায়গার কথা বলে, যা আমার আগে জানা ছিল না। মাত্র তিন কিলোমিটার দূরত্বে আবহাওয়া এত পরিবর্তন হতে পারে তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। খান্ডালা ঘাট ভিউ পয়েন্টে কুয়াশার মত মেঘের মধ্যে আপনি হারিয়ে যাবেন, মেঘের মধ্যে গা ভাসিয়ে দিতে পারেন আপন মনে। পৌষ মাঘ মাসে যেমন কুয়াশা ঠিক তেমনি ২০ ফিট দূরেও আপনি হয়তো ভালোভাবে দেখতে পাবেন না। খান্ডালা মুম্বাই - পুনে হাইওয়ের একটা পাহাড়ি এলাকা। আমরা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি তার নিচ দিয়ে টানেলের মাধ্যমে সড়ক যোগাযোগ সহজ করা হয়েছে।

Lanavola

দুই মিনিট হাঁটার দূরত্বে পাশেই রাজমাচি গার্ডেন (Rajmachi)। এখন থেকে ঐভাস (Oivas) ঝর্না বা খান্ডালা ঝর্না স্পষ্ট দেখা যায়। একটু বেশি দূরত্বের কারণে মনে হবে ঝর্নার পানি স্থির হয়ে আছে। আমাদের ঠিক নিচে পুনে - মুম্বাই হাইওয়ে (টানেল) আর অপর পাশে খান্ডালা হিলস, মাঝে উলহাস নদী বয়ে চলেছে আপন গতিতে। খান্ডালা ঘাট ভিউ পয়েন্ট আর আমরা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি তার দুরত্ব ২ মিনিটের হলেই এই পাশে মেঘের তেমন আনাগোনা নেই।

চলবে.........

২য় পর্বের লিংক এখানে