ভ্রমণ ডায়েরী

Home News Contact About

লোনাভালাতে একদিন শেষ পর্ব

সকালে থেকে একটু আফসোস হচ্ছিল কারন পুনে থেকে লোনাভালা যতদূর লোনাভালা থেকে মুম্বাই আর সামান্য একটু বেশি দূর। হাতে একটু সময় বেশি থাকলে মুম্বাইয়ে একটা শর্ট ট্যুর হয়ে যেত। কিন্তু চোখের সামনে এমন অনাকাঙ্খিত সৌন্দর্য দেখে সেই আফসোস আর রইলো না। অনাখাঙ্খিত এই কারণেই বললাম যে, আমাদের এই গোয়া ট্যুরে লোনাভালা কখনোই আসা হতো না যদি না গোয়া থেকে সরাসরি কলকাতার ট্রেন টিকেট পেতাম। গোয়া থেকে লোনাভালা আসতে ১৫ ঘণ্টার জার্নি না শুধু এর চাইতেও বেশি সময়ের জার্নির ক্লান্তি দূর করতেও এমন প্রকৃতির সান্নিধ্যই যথেষ্ট। যেহেতু বিকেলে বিশাখাপত্তম যাওয়ার ট্রেন আছে তাই এখানে আর বেশি দেরী করা যাবে না।

Lanavola

এবারের গন্তব্য রেইউড (Ryewood) পার্ক, লোনাভালা ড্যাম আর ভুসি ড্যাম। আমাদের হাতে সময় কম বলে রেইউড পার্ক স্কিপ করি। লোনাভালা ডেম এর কাছে আসতেই লম্বা ট্রাফিক জ্যামে আটকে যাই। তার মানে যদি আমরা লোনাভালা ড্যাম দেখে তারপর ফিরে আসতে চাই তখন আরও বড় ট্রাফিক জ্যামে আটকে যেতে পারি এই ভয়ে লোনাভালা ড্যামও আমরা স্কিপ করি ড্রাইভারের পরামর্শে। তাই গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যাই সোজা ভুসি ড্যামে।

Lanavola

ভুসি ড্যাম যেতে হলে মেইন রোড থেকে প্রায় ১০ মিনিট হাটতে হয়। ছোট একাটা বাজারের ভিতর দিয়ে হাটা শুরু করি। বাজার শেষে আশেপাশে ছোট ছোট টিলার মত পাহাড় আর বড়বড় কিছু পাথর পেরিয়ে পৌঁছে যাই ড্যামে।পথে সিদ্ধ ডিম খাওয়া ৭০ রুপি (১২ রুপি জনপ্রতি)। ভুসি ড্যামে পানি খুবই কম থাকার কারণে হতাশ হতে হয়। যেহেতু এখনো বর্ষাকাল ভালভাবে শুরু হয়নি তাই এত কম পানি। গুগুলে যেমন ছবি দেখেছিলাম ঠিক তার বিপরীত। তাই ১০ মিনিট থেকে আবার ফিরে আসি।

Lanavola

ঐ বাজারে এসে সবাই চা খেয়ে গাড়িতে উঠে আমাদের শেষ গন্তব্য লায়নস পয়েন্টের দিকে যাত্রা শুরু করি। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তায় যত উপরে উঠছি বৃষ্টির সাথে কুয়াশার মত মেঘ ঘন থেকে ঘনতর হচ্ছিল, যার কারণে সামনের কিছুই প্রায় দেখা যাচ্ছিল না। লায়নস পয়েন্টে পৌঁছে বৃষ্টির কারণে প্রায় ১০ মিনিট পর গাড়ি থেকে নামার সুযোগ হয়। বৃষ্টি থেমে গেলেও ঘন মেঘের কারণে আশেপাশের কিছুই প্রায় দেখা যাচ্ছিল না। থেমেথেমে বৃষ্টি হচ্ছিল, আর এই ফাঁকে প্রথমবার কাচা ভুট্টা পুড়িয়ে খেতে খেতে প্রকৃতির এই হঠাৎ পরিবর্তন উপভোগ করছিলাম।

Lanavola

মাত্র ২-৩ মিনিটের জন্যে মেঘ কিছুটা সরে যাওয়াতে এই জায়গার সৌন্দর্যের কিছুটা উপভোগ করার সৌভাগ্য হলো। দূরে মেঘ, পাহাড় আর আকাশের মিতালীর দারুন এক দৃশ্য চোখে পড়লো, সাথে আমাদের সোজা নিচে পাহাড়ের খাড়াইয়ের একটু আন্দাজ লাগানো গেল। ভেজা জায়গায় পা ফসকে পড়ে গেলে হাড়গোড়ও খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। বাকি সবাইকে গাড়িতে ডাকতে গিয়ে ফিরে এসে দেখি আবার সামনের পাহারগুলো মেঘের আড়ালে তার সৌন্দর্য লুকাতে বড্ড তাড়াহুড়া করছে। আরও এক ঘন্টা দেরী করি, যদি মেঘ সরে গিয়ে প্রকৃতি তার বৃষ্টিস্নাত সৌন্দর্যের আরও কিছু উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়।

Lanavola

বৃষ্টি থামা কিংবা মেঘ সরে যাওয়ার কোন আলামত চোখে না পড়াতে দুপুর ২ টার দিকে গাড়িতে করে চলে আসি লোনাভালা স্টেশনের ঠিক উল্টো পাশে যেখান থেকে আমাদের যাত্রা শুরু করেছিলাম। পাশেই মদিনা মসজিদে জোহরের নামাজ পড়ে লাঞ্চ সেরে নিলাম। ডিনারের জন্য কিছু শুকনা খাবার নিয়ে স্টেশনে চলে যাই ৩ টার দিকে। রুটি আর মুরগি ভুনা দিয়ে লাঞ্চ খরচ জনপ্রতি ৮৪ রুপি।

Lanavola

কী আশ্চর্যজনক, কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি সহ মেঘের মধ্যে দাঁড়িয়েছিলাম অথচ কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই মেঘ-বৃষ্টি কিছুই নেই। ক্লোয়াক রুম থেকে যার যার ব্যাগ গুলো নিয়ে স্টেশনের ওয়েটিং রুমে গিয়ে গোসল সেরে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগে প্লাটফর্মে এসে দেখি চারিদিকটা মেঘে ছেয়ে গেছে, যা শেষবারের মত চমক হিসেবে আমাদের চোখের সামনে। পরবর্তী যাত্রা বিশাখাপত্তম, অন্ধপ্রদেশ। মোটামুটি ২৭ ঘণ্টার একটা যাত্রা হতে চলেছে। একদম ঠিক সময়ে আমাদের ট্রেন Konark Express নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে এসে হাজির হয়। লোনাভালা আমাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ ছিল যা কখনই ভুলে যাওয়ার মতো না।

Lanavola

সপ্তম দিনের খরচ (কারণ, লোনাভালা ট্যুরের আগে আমরা গোয়া থেকে এসেছি তাই সপ্তম দিন)
ট্রেন ভাড়া- ১৫ রুপি (জনপ্রতি)
সকালের হালকা নাস্তা- ৭৭ রুপি (জনপ্রতি)
দুপুরের খাবার- ৮৪ রুপি (জনপ্রতি)
সিদ্ধ ডিম- ১২ রুপি
জীপ ভাড়া - ২৫০ রুপি জনপ্রতি
ডিনারের শুকনা খাবার - ৪৬ রুপি জনপ্রতি
বিশাখাপত্তনম এর জন্য ডরমেটরি বুকিং- ১৫০ রুপি জনপ্রতি
ভুট্টা - ৩০ রুপি
মোট- ৬৬৪ রুপি জনপ্রতি

সমাপ্ত

প্রথম পর্বের লিংক এখানে